কোরআন শরীফ পড়ার উপকারিতা

 

১। নিশ্চয় যারা দুনিয়াতে কোরআন তেলাওয়াত করে সালাত আদায় করে গোপনে প্রকাশ্যে আমি যে রিজিক দান করলাম সে রিজিক থেকে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে যে ব্যবসার কখনো লস নেই যে ব্যবসা কখনো ধ্বংস হবে না শুধু লাভ আর লাভ




 আল্লাহ যেন তাদেরকে পরিপূর্ণ প্রতিদান দিয়ে দেয় তাদেরকে অনুগ্রহ দিয়ে দেয় । আল্লাহ আমাদেরকে সব সময় কোরআন পড়ার তৌফিক দান করুন।  (আমিন) তাহলে চলুন আর দেরি না করে এক্ষুনি জেনে নিয়ে কোরআন পড়লে কি লাভ ।


২। কোরআনের সাথে যদি কেউ মহব্বত লাগায় যে ব্যক্তি কোরআন পড়ে সে যদি বস্তির ও হয় আল্লাহ তা'আলা তার দাম ও মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেয় ।


হাদিস:  ( ইবনে মাজাহ হাদিস:২১৮)

হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব তখন আমিরুল মোমিনীন তিনি মক্কায় একজনকে প্রশাসনিক কাজের দায়িত্ব দিলেন যাকে দায়িত্ব দিলেন তার নাম: রাফে ইবনে আব্দুল  আফজা । ওমর ইবনুল খাত্তাব বললেন মক্কার আশেপাশে এলাকাগুলির তুমি কাকে দায়িত্ব দিয়েছো রাফি ইবনে আব্দুল হাদিস বললেন আমি যাকে দায়িত্ব দিয়েছি তার নাম ইবনে আবজা । হযরত ওমর বলল ইবনে আবজা আবার কে হযরত রাফে বললেন ইবনে আবজা তিনি আমাদের একজন আজাদ কৃত গোলাম হযরত ওমর বললেন তুমি এটা আবার কি করলা একজন গোলামকে তুমি প্রশাসক বানাইয়া দিলেন ।

রাখে বললেন তিনি একজন গোলাম হলেও তার মধ্যে আলাদা তিনটি গুণ আছে এ কারণে আমি তাকে প্রশাসক বানিয়ে দিয়েছি  ১। তিনি একজন কোরআনের অভিজ্ঞ ব্যক্তি ২। ফারাইজের  ব্যাপারে তিনি   দক্ষ ব্যক্তি ৩। তিনি একজন বিচারক বিচার সূক্ষ্ম করতে পারে এই তিন গুণের কারণে আমি তাকে প্রশাসক বানিয়ে দিয়েছি।


৩। কুরআনের একটি অক্ষর যদি কেউ পড়ে তার আমলনামায় দশটি সওয়াব লিখা হয়।

(হাদিস: তিরমিজি শরীফ ২৯১০)

নবী করীম সাল্লাল্লাহু সালাম বলেন কেউ যদি কোরআনের একটি আয়াত পড়ে সাথে সাথে তার জন্য দশটি ছ্ওয়াব লেখা হয়। যেমন: আলিফ লাম মিম তিনটি আলাদা আলাদা শব্দ প্রত্যেক শব্দের জন্য দশ নেকি তিন শব্দের জন্য ৩০ নেকি।


৪। কোরআন যে পড়ায় ও পড়ে আল্লাহর নবী সা: তাকে দুনিয়ার সর্ব উত্তম ব্যক্তি বলেছেন।

(হাদিস: তিরমিজি ২৯০৯)

নবী করিম সা: বলেন তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি যে ব্যক্তি নিজে কোরআন শিখে ও অন্যকে শিক্ষা দেয়।


৫। আল্লাহর নবী বলেন যে ব্যক্তি কোরআন পড়ে তার দৃষ্টান্ত সুস্বাদু কমলা লেবুর মত।

(হাদিস: বুখারী ৫৪২৭)

যেই মুসলমান কোরআন পড়ে তার দৃষ্টান্ত মালটা বা কমলার মত যার ঘ্রাণ বড় চমৎকার সাধ বড় চমৎকার আল্লাহ বলেন যে ব্যক্তি কোরআন পড়ে আর যে ব্যক্তি কোরআন পড়ে না তাদের দুজনের দৃষ্টান্ত। যে ব্যক্তি কোরআন পড়ে তার দৃষ্টান্ত ঘ্রাণ যুক্ত ঈমানদার হয়ে যায়। আর যে কোরআন পড়ে না তার দৃষ্টান্ত । তার দৃষ্টান্ত খেজুরের মত যার সাধ আছে কিন্তু ঘ্রান নেই।

যদি কোন মুনাফিক কোরআন পড়ে তার দৃষ্টান্ত গোলাপ ফুলের মত । যদিও সে মুনাফিক কুরআন পড়ে তার ঘ্রাণ বড় সুন্দর কিন্তু তার স্বাদ বড় তিতা।


৬। রাতের বেলা উঠে যদি কেউ কোরআন শরীফ পাঠ করে তার কোরআন শরীফ পাঠ করা ফেরেশতারা শুনে। 

(মুসলিম শরীফ হা:৭৯৬)

হাদিসের সাহাবী বর্ণনাকারীর নাম আবু সাঈদ খুদি রা যার সম্পর্কে বর্ণনা করছেন তার নাম উসাঈদ ইবনে হুজাইর । এই উসাইড ইবনে হুজাইর বলেন আমি একদিন রাতে আমার আস্থা বলে কোরআন পড়ছিলাম তখন দেখি আমার ঘোড়া লাফাইতে ছিল আমি কোরআন পড়া বন্ধ করলাম দেখি ঘোড়াও লাফানো বন্ধ করলো এরপর আবার কোরআন পড়া শুরু করলাম তখন দেখি আমার ঘোড়া লাফাইতেছে তখন আমি মনে মনে ভাবলাম যে পাশে আমার ছেলেকে সোনো আছে না জানি এই ঘোড়া আমার ছেলের উপর পা তুলে তুলে মেরে ফেলতে পারে  এ ভয়ে আমি কোরআন পড়া বন্ধ করলাম। এরপর আমি ঘোরার কাছে গেলাম উপর দিকে তাকালাম দেখি আমার মাথার উপর মেঘ খন্ড দেখা যায় মেঘখণ্ডের মধ্যে অনেকগুলি বাতি দেখা যায় আমি তাকায়া দেখলাম ওই মেঘ খন্ড ও বাতিগুলি শূন্যের উপর চলে যায় আর দেখতে পাই না। সকালবেলা আমি আল্লাহর নবীর কাছে আসলাম আসার পর আমি আল্লাহর নবীকে বলতে লাগলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ সা: আমি আমার ঘোরার আস্থা এর মধ্যে কোরান পড়তেছিলাম দেখি আমার ঘর আলা পাইতেছিল তখন আল্লাহর নবী বললেন তুমি যদি আরো কোরআন পড়তা তখন উসাইদ ইবনে হুজাইদ বললেন আমি পড়তেছিলাম ঘোড়া আবার লাফায় আল্লাহর নবী বললেন তুমি যদি আরো পড়তা হুসাইদ ইবনে হুজাইয়ের বললেন আমি পড়তেছিলাম ঘোড়া লাফায় এ ভয়ে আমি কোরআন পড়া বন্ধ করলাম না জানি আমার ছেলের উপর ঘোড়া পা তুলে দিয়ে মেরে ফেলায়। তখন আল্লাহর নবী বললেন তুমি যখন কোরআন পড়তে ছিলে রাতে মেঘের মধ্যে যে বাতি গুলি দেখতে ছিলে সেগুলো বাতি না সেগুলো ছিল ফেরেশতা তোমার কোরআন পড়া শুনতে ছিল। তখন আল্লাহর নবী বললেন তুমি যদি সারারাত কোরআন পড়তে সকালবেলা সেই ফেরেশতাদেরকে সকলেই দেখতে পেত।


৭। যে ব্যক্তি কোরআন পড়ে তাকে দুনিয়া ও আখেরাতে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়।

  (সহি বুখারী ১৩৪৩)

আল্লাহর নবী ওহুদের যুদ্ধে দুই শহীদকে একসাথে কাপড়ে মুরাইতেছে তখন আল্লাহর নবীর সাহাবীদের প্রশ্ন করলেন এই দুই জনের মধ্যে কোরআন কে বেশি পারে তখন আল্লাহর নবী সা : কোরআন যে বেশি পারে তাকে প্রাধান্য দিতেন। 



৮। যে ব্যক্তি কোরআন পড়ে সেই ব্যক্তি আল্লাহর পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।

(ইবনে মাজাহ২১৫ )

আল্লাহর নবী সা: বলেন মানুষের মধ্যে কিছু মানুষ আছে যারা আল্লাহর পরিবারের অন্তর্ভুক্ত সাহাবারা প্রশ্ন করলেন এরা কারা আপনার কাছে জানতে চাই। তখন আল্লাহর নবী জবাব দিলেন যারা কুরআনের ধারক বাহক তারা আল্লাহর পরিবারের অন্তর্ভুক্ত।


৯। কুরআনওয়ালাকে সম্মান করা আল্লাহকে সম্মান করা।

(আবু দাউদ: ৪৮৪৩)

১। কুরআন ওয়ালা কে সম্মান করা আল্লাহ কে সম্মান করা ২। ঈমানদার সাদা দাড়িওয়ালা কে সম্মান করা আল্লাহকে সম্মান করা ৩। ন্যায় পরায়ণ শাসককে সম্মান করা আল্লাহকে সম্মান করা।


১০।  এক সাহাবীর বিয়ে করার টাকা নেই নবী করীম সা: তার মধ্যে কোরআন থাকার কারণে এটাই মোহরানা ধরে বিয়ে দিছে।

সহি বুখারী ৫৩০

নবীজির কাছে এক মহিলা সাহাবী এসে বলল ইয়া রাসুল আল্লাহ আমি আপনাকে আপনার জন্য দান করে দিলাম । তখন এক সাহাবী দাঁড়ায়া বলল হুজুর এখানে যদি আপনার কোন আগ্রহ না থাকে তাহলে এই মহিলার সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দেন। তখন নবী  সাঃ বললেন কি আছে তোমার টাকা পয়সা আছে তখন সাহাবী বলল না তখন সাহাবী বলল আল্লাহর কসম আমার কিছুই নাই। তখন নবী  সাঃ বলল তুমি বাসায় যাও তোমার কিছু আছে কিনা তালাশ করো লোহার যদি একটি আংটি হয় তাহলে আমার কাছে নিয়ে আসো তখন সাহাবী এসে বলল লোহার আংটিও নেই আমার কাছে সবচাইতে দামি জিনিস হলো আমার এই লুঙ্গিটা ছাড়া আমার কিচ্ছু নেই। তখন নবীর সাঃ বললেন যাও বিয়ে হবে না তখন সে যাইতে লাগলো। তখন নবী করীম সাঃ তাকে ডাক দিল এই তুমি কি কুরআন পারো তখন সে সাহাবী বলল হ্যাঁ আমি কুরআনের ওই সূরাটা পারি । তখন আল্লাহর নবী সাঃ কুরআনের কারণে মোহরানা ধরে তার সাথে বিয়ে দিল ।


১১। কিয়ামতের মাঠে কোরআন ওয়ালাকে বলা হবে তুমি পড়ো আর উপরে ওঠো তুমি পড়ো আর উপরে ওঠো যখন তোমার পড়া শেষ তখন তোমার স্টেজও শেষ।

 ( আবু দাউদ  ১৮৬৪ )

আল্লাহর নবী বলেন কোরআনওয়ালা কে বলা হবে তুমি পড়ো আর চরতে থাক। তুমি পড়তে থাকো আর  উপরে চরতে থাকো । ধৃরস্থিরভাবে পড়ো যেভাবে তুমি দুনিয়াতে পড়েছিলে তোমার শেষ সীমানা হবে যেখানে তোমার পড়া শেষ সেখানে ওই মর্যাদায় আল্লাহ তাকে অধিষ্ঠিত করবে।


( মুসনাদে আহমদ ২২৯৫০ )

১২। কিয়ামতের মাঠে হাফেজদের কে কোরআন গিয়ে বলবে এই তুমি আমাকে চিনো তখন হাফেজ রা বলবে না চিনি না। তখন কোরআন বলবে আমি তোমার কোরআন যা যা দুনিয়াতে আমি তোমাকে দিনের বেলা পিপাসিত রেখেছিলাম রাতের বেলা খেতে দেইনি। তখন তাকে ডান হাতে জান্নাতে থাকার মালিকানা দিয়ে দেওয়া হবে ও বাম হাতে জান্নাতে চিরস্থায়ীভাবে থাকার সার্টিফিকেট দেওয়া হবে । তার মাথার মধ্যে সম্মানীয় মুকুট পরিধান করা হবে । তার মা-বাবাকে এমন তুই জোড়া পোশাক পরানো হবে । দুনিয়ার সবাই মিলে এই দুই জোড়া পোশাকের মূল্য দিতে পারবে না । তখন তার বাবা-মা জিজ্ঞেস করবে আমাদেরকে কেন এত সম্মানী পোশাক পরানো হল। তখন জবাব দেওয়া হবে তোমার সন্তান দুনিয়াতে কোরআন ধারণ করেছে ও পড়েছিল এই কারণে ।


১৩। কোরআন কিয়ামতের ময়দানে কোরআনওয়ালার জন্য সুপারিশ করবে।

( সহি ইবনুল হিব্বান হাঃ ১২৪ )

কোরআন এমন সুপারিশকারী যার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে । কোরআন যে সামনে রাখবে অর্থাৎ কোরআন অনুযায়ী আমল করবে কোরআন তাকে টানতে টানতে জান্নাতে নিয়ে যাবে । আর যে কুরআন অনুযায়ী আমল করবে না কোরআন তাকে টানতে টানতে জাহান্নামে নিয়ে যাবে । 


শেষ কথা ঃ 

কোরআন তেলাওয়াতের সময় ছয়টি বিষয় মাথায় রাখা

১ । প্রতিদিন কোরআন নিয়ে গবেষণা করা, কুরআনের আয়াত নিয়ে গবেষণা করা ।

২। প্রতিদিন কুরআন চর্চা করা ।

৩। কুরআন মাঝে মাঝে অন্যের কাছ থেকে শোনা।

৪ । কোরআন মাঝে মাঝে অন্যকে শোনানো ।

৫ । কুরআন যখন আমরা পড়বো তখন কুরআন পরিত্যাগ করার চিন্তা করব না ।

৬। কোরআন পড়ার সময় চিন্তা করা যে আমার কোরআন পড়া শুদ্ধ হয় কিনা  । অবিজ্ঞ ব্যক্তির কাছ থেকে কোরআন শিক্ষা করা।
























এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url