সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে আসার নিয়ম

 


সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে আসার নিয়ম

সৌদি আরব প্রবাসীদের একটি বড় অংশ বাংলাদেশে অবস্থানরত পরিবারের কাছে আসা-যাওয়া করে থাকে। কেউ ছুটিতে, কেউ ব্যবসায়িক কারণে, আবার কেউ স্থায়ীভাবে দেশে ফেরার উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করেন। তবে ভ্রমণের আগে যেসব নিয়ম-

কানুন মানতে হয়, তা সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলে নানা সমস্যায় পড়তে হতে পারে। নিচে ধাপে ধাপে সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে আসার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া ও নিয়ম আলোচনা করা হলো।


১. বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা নিশ্চিত করা

বাংলাদেশে আসার জন্য সবার আগে আপনার বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকতে হবে। যদি পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময় ঘনিয়ে আসে, তবে সৌদি আরবে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস বা কনস্যুলেটে গিয়ে নবায়ন করতে হবে।

  • ন্যূনতম ৬ মাসের পাসপোর্ট মেয়াদ থাকা আবশ্যক।

  • সৌদি আরব থেকে স্থায়ীভাবে ফেরার ক্ষেত্রে ইকামা বাতিলের কাগজপত্রও প্রয়োজন হতে পারে।


২. টিকেট বুকিং

বাংলাদেশে ফেরার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য এয়ারলাইন্সের টিকেট আগে থেকে বুক করা জরুরি। সাধারণত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সৌদি এয়ারলাইন্স, এমিরেটস, কাতার এয়ারওয়েজ ইত্যাদি রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে।

  • সরাসরি ফ্লাইটে সময় কম লাগে।

  • স্টপওভার ফ্লাইটে খরচ কিছুটা কম হলেও সময় বেশি লাগে।


৩. ইকামা ও এক্সিট-রিএন্ট্রি ভিসা

যারা চাকরি বা কাজের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে আছেন, তাদের ইকামা অবশ্যই বৈধ থাকতে হবে।

  • ছুটিতে আসতে চাইলে এক্সিট-রিএন্ট্রি ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসতে হবে।

  • স্থায়ীভাবে দেশে ফিরতে চাইলে ফাইনাল এক্সিট ভিসা নিতে হবে।
    এসব কাগজপত্র সঠিকভাবে সংগ্রহ না করলে বিমানবন্দরে সমস্যায় পড়তে হতে পারে।


৪. স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নিয়ম

সৌদি আরব বা বাংলাদেশ উভয় দেশেই যাত্রীদের জন্য কিছু স্বাস্থ্য সম্পর্কিত শর্ত থাকতে পারে। যেমন:

  • কোভিড-১৯ সময়ে ভ্যাকসিন সনদ ও পিসিআর টেস্ট বাধ্যতামূলক ছিল।

  • বর্তমানে (২০২৫ অনুযায়ী) অনেক শর্ত শিথিল হয়েছে, তবে যাত্রার আগে সর্বশেষ নির্দেশনা চেক করা জরুরি।

  • দীর্ঘ ফ্লাইটের কারণে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও প্রেসক্রিপশন সাথে রাখা উচিত।


৫. কাস্টমস নিয়ম

বাংলাদেশে ফেরার সময় কিছু কাস্টমস আইন মেনে চলতে হয়।

  • নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বর্ণ আনা যায়, তবে তার সীমা অতিক্রম করলে কাস্টমস ডিউটি দিতে হয়।

  • অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রা বহন করলে তা ঘোষণা করতে হবে।

  • কোনো নিষিদ্ধ দ্রব্য যেমন নেশাজাতীয় দ্রব্য, অস্ত্র ইত্যাদি বহন করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।


৬. লাগেজ বা মালামাল বহন

প্রত্যেক এয়ারলাইন্সের লাগেজ বহনের নিজস্ব নিয়ম রয়েছে।

  • সাধারণত ২০-৩০ কেজি পর্যন্ত লাগেজ ফ্রি বহন করা যায়।

  • অতিরিক্ত লাগেজের জন্য আলাদা চার্জ দিতে হয়।

  • হ্যান্ড লাগেজ সাধারণত ৭ কেজি পর্যন্ত নেওয়া যায়।


৭. সৌদি এয়ারপোর্টের প্রক্রিয়া

ফ্লাইটের দিন যাত্রার আগে সময়মতো এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে হবে।

  • টিকেট, পাসপোর্ট, ইকামা (যদি প্রযোজ্য হয়) ও ভিসা চেক করা হবে।

  • ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স নেওয়ার পর যাত্রী বোর্ডিং করবে।
    সঠিক কাগজপত্র না থাকলে সৌদি এয়ারপোর্ট থেকেই ফেরত পাঠানো হতে পারে।


৮. বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর প্রক্রিয়া

ঢাকা, চট্টগ্রাম বা সিলেট এয়ারপোর্টে পৌঁছানোর পর যাত্রীদের কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন চেক করতে হয়।

  • পাসপোর্ট স্ক্যান করে দেশে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।

  • লাগেজ সংগ্রহের পর কাস্টমস কাউন্টারে প্রয়োজনীয় ঘোষণা দিতে হয়।


৯. স্থায়ীভাবে দেশে ফেরার নিয়ম

অনেক প্রবাসী স্থায়ীভাবে দেশে ফেরেন। এ ক্ষেত্রে যেসব কাজ করা প্রয়োজন:

  • সৌদি আরবে চাকরির চুক্তি ও ইকামা বাতিল করা।

  • ব্যাংক একাউন্ট ও অন্যান্য আর্থিক লেনদেন বন্ধ করা।

  • বাংলাদেশে ফিরে স্থায়ীভাবে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাথে নিয়ে আসা।


১০. কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

  • ভ্রমণের আগে সর্বশেষ সৌদি আরব ও বাংলাদেশের ভ্রমণ নীতিমালা যাচাই করুন।

  • কোনো এজেন্টের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর না করে নিজেই কাগজপত্র চেক করুন।

  • অতিরিক্ত নগদ অর্থের পরিবর্তে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা পাঠানো নিরাপদ।

  • ফ্লাইট মিস না করার জন্য নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই এয়ারপোর্টে পৌঁছানো উচিত।


উপসংহার

সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে আসার নিয়ম খুব জটিল নয়, তবে সঠিক কাগজপত্র ও আইন মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। বৈধ পাসপোর্ট, ভিসা, টিকেট ও স্বাস্থ্য সনদ থাকলে ভ্রমণ সহজ হয়। এছাড়া কাস্টমস আইন মেনে চলা এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করলে নিরাপদে ও ঝামেলামুক্তভাবে দেশে ফেরা সম্ভব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url